টোবাটেক সিং-সাদাত হোসেন মন্টো|গল্পপাঠ :প্রদীপ বৈদ্য(BNGG,SEM6-LCC)&BNG-H-IDC #39👇

Sdílet
Vložit
  • čas přidán 13. 10. 2023
  • টোবা টেক সিং' গল্পটি বর্ণনাধর্মী রীতিতে লেখা হয়েছে। দেশভাগ পরবর্তীকালে ভারত-পাকিস্তান দুটি দেশের রাষ্ট্রনীতির এক অমানবিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এই গল্প তীব্র এক প্রতিবাদ রেখে গেছে। নিছক রাজনৈতিক গল্প নয়-এই কাহিনি মানবিক মর্যাদা লুণ্ঠনের কথা বলে গেছে।ব্যক্তি পরিচয়ের অস্তিত্বহীনতার প্রশ্নে রাষ্ট্রনৈতিক মূঢ় নেতাদের অবিবেচক মানসিকতাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত গল্পটি মানবিকতার চিহ্ন রেখে গেছে অমানবিক কাঁটা তারের সীমান্তে।
    #
    কাহিনীর প্রথম বাক্যটিতেই উচ্চারিত হয়েছে তীব্র শ্লেষ। তা হল -“দেশ-বিভাগের দু-তিন বছর পরে পাকিস্তান আর হিন্দুস্থান সরকারের খেয়াল চাপল সাধারণ কয়েদীদের মতো পাগলদের বদলাবদলি করা হোক।” অর্থাৎ, ধর্ম-পরিচয়ের ভিত্তিতে হিন্দুস্থানের পাগলা গারদে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত মুসলমানদের পাঠিয়ে দেওয়া হবে পাকিস্তানে আর পাকিস্তানের পাগলা গারদে হিন্দু বা শিখ আবাসিকদের পাঠিয়ে দেওয়া হবে হিন্দুস্থানে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর তা কর্যকর করবার দিনক্ষণ নির্ধারিত হল। সেই প্রেক্ষিতেই লাহোরের এক পাগলা গারদ, তার আবাসিকদের প্রাসঙ্গিক উল্লেখের মধ্য দিয়ে কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসেবে বিশন সিং-এর সঙ্গো পাঠক পরিচিত হন।
    এইভাবে মানসিক ভারসাম্যহীনদের হস্তান্তরের বিষয়টি যে কতোদুর অর্থহীন তা ওই পাগলা গারদের কয়েকজন আবাসিকের ক্ষণিক পরিচয়ের মধ্য দিয়ে গল্পকার প্রতিষ্ঠিত করেছেন। দীর্ঘ বারো বছর ধরে ইসলামী ধর্মপুস্তক পাঠক একজন আবাসিকের কাছে যেমন পাকিস্তানের ধারণা হল- “হিন্দুস্থানের এমন একটা জায়গা যেখানে দাঁড়ি কামানোর ক্ষুর তৈরি হয়।" আর একজন শিখ অপর এক শিখ আবাসিকের কাছে ভীত হয়ে জানায় যে হিন্দুস্তান নামক দেশটার সঙ্গেই তো তার কোনো পরিচায় নেই। সেখানকার ভাষাও সে জানে না। আবার আবাসিকদের মধ্যে এমনও কয়েকজন ছিল। যারা আসলে খুনে অভিযুক্ত অপরাধী- যাদের ফাঁসির দড়ি থেকে বাঁচানোর জন্য আত্মীয়রা অনৈতিক পথে উৎকোচ দিয়ে পাগলা গারদে চালান দেবার ব্যবস্থা
    করেছিলেন। তারাও যে পুরো বিষয়টা সম্পর্কে খুব ওয়াকিবহাল ছিল এমন নয় শুধুমাত্র তারা জেনে ছিল যে দেশনেতা মহম্মদ আলী জিন্না যাকে কায়েদ-এ-আজম বলা হয়-তিনি নাকি মুসলামানদের জন্য একটি পৃথক দেশ গড়েছেন-যার নাম পাকিস্তান। যদিও তারা নিজেদের এই ঠিকানার অবস্থান যে কোথায় পাকিস্তান না হিন্দুস্তান সে বিষয়ে কোনো বিশেষে ধারণার অধিকারী ছিল না। অন্য একজন আবাসিক হিন্দুস্তান-পাকিস্তান সংক্রান্ত গোলমাল থেকে বাঁচবার সহজ পথ হিসেবে একটা লম্বা গাছের মগডালে চড়ে বসলো।
    অসম্ভব সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ শক্তির দ্বারা মান্টো এইভাবে পাগলা গারদের বিভিন্ন আবাসিকদের রুচিগত ভিন্নতার সামান্য উল্লেখের মধ্য দিয়ে তাদের চারিত্রিক ভিন্নতাকে দু'একটি আঁচড়ে ফুটিয়ে তুলেছেন; এবং এই বিস্তৃত চালচিত্র নির্মাণ করে তারপর সেখানে এই গল্পের প্রধান চরিত্র বিশন সিং-এর সঙ্গে পাঠকের পরিচয় ঘটিয়েছেন।
    #
    বিশন সিং-যে শেষ পর্যন্ত এই গল্পের আলোকবৃত্তে এসেছে-সে ছিল ধর্মে শিখ, পাগলা গারদের পনেরো বছরের বাসিন্দা। দিনরাত নিদ্রাহীন থাকতো বিশন। এমন কি কখনো না শুয়ে দাঁড়িয়ে থাকবার জন্য তার পা, পায়ের মাংসপেশী ফুলে গিয়েছিল। শারীরিক কষ্ট সম্পর্কে বিন্দুমাত্র বোধ ছিলেন না তার। সব সময় তার মুখে শোনা যেত এই জাতীয় অর্থহীন শব্দগুচ্ছ-“ওপড় দি গড়-গড় দি অ্যানেক্স দি বেধ্যানা দি মুখ দি দাল অব দি লালটেন।” অবশ্য হিন্দুস্তান ও পাকিস্তানে আবসিকদের বদলির কথা নিয়ে আলোচনা শুরু হলে সে সেই সব আলোচনা মন দিয়ে শুনতো এবং তখন ‘দাল অফ দি লালটেন’ এর জায়গায় অদ্ভুতভাবে উচ্চারণ করতো-'দি দাল অফ পাকিস্তান গবর্ণমেন্ট, পরে আবার 'অফ দি পাকিস্তান গবর্ণমেন্ট'-এর জায়গায় সে বলতো, 'অফ দি টোবা টেক সিং'। অন্যান্য আবাসিকদের কাছে টোবা টেক সিং-এর অবস্থান সম্পর্কে সংশয় জাগে। তবে শিয়ালকোটের অবস্থান যেমন হিন্দুস্থান থেকে পরিবর্তিত হয়ে পাকিস্তান হয়ে গিয়েছে, সেক্ষেত্রে তাদের লাহোর যে কালে হিন্দুস্তান হবে না কে জানে কিংবা গোটা হিন্দুস্তানটাই পাকিস্তান-এই সব সন্দেহ তথাকথিত মনোরোগী বা সুস্থ মানসিকতা সম্পন্ন মানুষ কেউই যখন নির্ধারণ করতে পারছে না-তখন তীব্র কশাঘাতের মতো গল্পকার মান্টো সেই সময়ের সত্যকে তীব্র শ্লেষাত্মক প্রশ্নে উপস্থাপন করেন-“কেউ কি বুকে হাত রেখে এমন কথা বলতে পারে যে হিন্দুস্তান আর পাকিস্তানের মুণ্ড দুটোই কোনোদিন উড়ে যাবে না?”
    #
    আর এইসব সাধারণীদের ভিড়েই স্বতন্ত্র হয়ে উঠেছে পনেরো বছর ধরে পাগলা গারদে থাকা বিশন সিং, যে প্রায় সময়েই অর্থহীন কিছু শব্দ বা অভ্যস্ত একটি অর্থহীন বাক্য উচ্চারণ করে থাকে। রাত দিন না ঘুমিয়ে, না-শুয়ে স্ফীত পা নিয়ে দাঁড়িয়ে-থাকা বিশন সিং সর্বার্থেই স্বতন্ত্র ও একক। টোবা টেক সিং তার স্বভূমী - সেখানকার জমিদার ছিল সে। বিশন সিং-সবাই যাকে টোবা টেক সিং বলেই ডাকতো-তার মধ্যে স্বভূমি এবং স্ব-অবস্থান থেকে কিছুতেই বিচ্যুত না হবার সংকল্প ধীরে ধীরে মহীরুহের আকার নিতে থাকে। তার পরিচয় পাওয়া যায় চূড়ান্তভাবে লাহোর পাগলা গারদের হিন্দু এবং শিখ আবাসিকদের হিন্দুস্তান-পাকিস্তানের সীমান্তরেখা ওয়াঘাতে হিন্দুস্তানের কর্তৃপক্ষের হাতে হস্তান্তরের সময়। বিশন সিংহ ওরফে টোবা টেক সিং শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রযন্ত্রের এই খামখেয়ালিপনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে তার নিজের মতো করে। শীতের রাতে সমস্ত প্রতিরোধ ভেঙে নো-ম্যানল্যাণ্ডে, দুধারের কাঁটা তারের মাঝখানটিতে সে অনড় দাঁড়িয়ে থাকে এবং ভোর হবার সঙ্গে সঙ্গে শেষবারের মতো সেই মাটিতেই চিরঘুমে শায়িত হয়। যে মাটি হিন্দুস্তান বা পাকিস্তান-কোনো দেশেরই নয়-সেই মাটিই যেন তার ইঙ্গিত স্বাধীন ভূখণ্ড টোবা টেক সিং যা তথাকথিত ধর্মীয় বিভাজনের ভিত্তিতে লক্ষ কোটি মানুষের স্বদেশ - পরিচিতের অধিকারকে ধ্বংস করে। ফেলার চক্রান্তের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে ওঠে।
    ***********
    গ্ৰন্থ ঋণ : স্বাধীনতা প্রাক ও উত্তরের বাংলা ছোটগল্প বিচিত্রা - সম্পাদনা সরোজমোহন মিত্র। প্রবন্ধ : টোবা টেক সিং - দেশভাগের শহীদ - মন্দিরা রায়

Komentáře • 1