ভৌতিক গল্প || জ্বীনের বদ নজর || NAJAR || Mymensingh Short Stories || Ariful Islam Chowdhury
Vložit
- čas přidán 5. 07. 2024
- সালটা ২০১৩। আমরা একটা যৌথ পরিবারে থাকি। আমার আর আমার ফুপির বয়সের পার্থক্য খুব বেশি ছিল না, আর বন্ধুসুলভ সম্পর্ক থাকার কারণে আমার ঘরটা ফুপির সাথে শেয়ার করতে হত। আমাদের ঘরের বারান্দার সাথে ছিল একটা বাগান যেখানে দাদাভাই নানা ফলমূলের গাছ লাগিয়েছিলেন। সেখানেই একটা পেয়ারা গাছ ছিল। আমাদের ঘরের ওয়াশরুমের দরজা ছিল বারান্দায়, আর বারান্দা থেকে স্পষ্টভাবে দাদার সেই বাগানটা দেখা যেত।
একদিন রাতে, হঠাৎ ফুপির ওয়াশরুমে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে। তখন রাত বাজে ২টা কি ৩টা। সে বেশি কিছু না ভেবেই ওয়াশরুমে যায়। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে বেসিনে দাঁড়িয়ে হাত ধুচ্ছে, তখন হঠাৎ তার চোখ পড়ে দাদাভাইয়ের সেই বাগানের দিকে। সে স্পষ্ট দেখতে পায় যে বাগানের পেয়ারা গাছে বসে আছে একটা সাদা কাপড় পরা মহিলা, খুব তৃপ্তি সহকারে পেয়ারা খাচ্ছে। ফুপি ছিল খুব সাহসী। সে মজার ছলে জোরে চিল্লিয়ে বলে, "চোর, চোর!" ঠিক তখনই ঐ সাদা কাপড় পরা মহিলা ফুপির দিকে তাকায়। তার তাকানো ছিল খুবই অস্বস্তিকর। ফুপির চোখে চোখ পড়তেই ফুপির অস্বস্তি লাগতে শুরু করে। তখন সে কিছুটা ভয় পেলেও, কিছু হবে না ভেবে ঘরে এসে ঘুমিয়ে যায়।
ওইদিন রাতে ফুপি স্বপ্ন দেখে, একজন মহিলা, দেখতে খুবই বিশ্রী, তাদের বাসায় এসেছে। তাকে দেখতে, তারপর তার চুল দেখার নাম করে তার কানের কাছে মুখ এনে তার কানে কানে বলছে, "তোর কোনোদিন সংসার করা হবে না।" এই স্বপ্ন দেখে ফুপির ঘুম ভেঙে যায়। সে উঠে শুনতে পায় চারদিকে আযান দিচ্ছে। আমাদের এলাকায় বিশ্বাস করা হয় আযানের আগের স্বপ্নগুলো সত্যি হয়, যার কারণে ফুপি চিন্তায় পড়ে যায় কি করবে ভেবে। আমাকে যখন ফুপি পুরো ঘটনা খুলে বলে, তখন আমি তাকে পরামর্শ দেই তার বাবাকে জানানোর কারণ তিনি অনেক কিছু জানতেন এইসব সম্পর্কে। তারপর ফুপি সবকিছু খুলে বলার পর তার বাবা তাকে পরীক্ষা করে দেখেন যে ওই মহিলা ফুপির উপর ভর করতে চাইছে।
ফুপি দেখতে খুব সুন্দর ছিল, আর আগেও সে জিনের নজরে পড়েছে। কিন্তু কিছু সুরা পড়ার পর তারা তাকে ছেড়ে দিয়েছিল। তাই দাদাভাই এতটা নিয়ে তেমন একটা ভাবেননি। এরপর, ফুপি কিছু সুরা পরে তার শরীর বন্ধ করার চেষ্টা করেন। ওইদিন বিকেলে দাদাভাই জাম পাড়ার জন্য আমাদের একতলার ব্যালকনিতে উঠেন, যেটা পেয়ারা গাছের সাথেই ছিল। তবে হুট করেই কোনো কারণ ছাড়া আমাদের ব্যালকনির সেই সাইড ভেঙে পড়ে যায়, যেখানে দাদা দাঁড়িয়ে ছিলেন। আমাদের বাসা এত হালকা না যে এত সহজে ভেঙে পড়বে।
তাই আমরা বিষয়টি দ্রুততার সাথে হাসপাতালের মসজিদের ইমামকে জানাই। উনি বলেন, দাদাভাই যে জিন থেকে ফুপিকে বাঁচানোর চেষ্টা করছিলেন, সে খুবই শক্তিশালী। হুজুর কিছু করতে পারবেন না, আরো ভালো হুজুর দেখাতে হবে। কিন্তু তিনি কিছু সময়ের জন্য আমাদের সবার শরীর বন্ধ করে দিয়ে যান।
পরের দিন দাদাভাই তার নিকট আত্মীয়ের কথা মতো শম্ভুগঞ্জ যান, এক নাম করা হুজুরের কাছে ফুপির চিকিৎসা করাতে। সেই হুজুর ফুপির চিকিৎসা করেন এবং বলেন, ফুপি যেন বিয়ের আগ পর্যন্ত কোনোভাবেই ওই বাগানে সন্ধ্যায় না যায়, ওই ওয়াশরুমে যেন কাল সন্ধ্যায় না যায়, এবং চুল ছেড়ে যাতে বেশি ঘুরাঘুরি না করে। প্রথম প্রথম সবাই ফুপিকে চোখে চোখে রাখছিল, কিন্তু এর এক বছর ঘুরতেই আমরা ঘটনাটার রেশ কাটিয়ে উঠি, যার ফলে আর এই বিষয়ে লক্ষ্য রাখা হয়নি।
এর মাঝেই এসে পড়ে পহেলা বৈশাখ। আমরা সবাই মিলে লাল শাড়ি পরে ঘুরতে যাই পার্কে। তবে ঘুরাঘুরি করে ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। তখন সাথে আমাদের বাসার পিছনের একটা মেয়ে ও ছিল, তাই আমরা ভাবি আগে তাকে বাসায় পৌঁছে দেব, তারপর আমরা যাব। কিন্তু সেটাই মূলত আমাদের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল। তার বাসাটা ছিল আমাদের বাগানের পিছনেই। তাকে বাসায় পৌঁছে আমাদের বাগান হয়ে বাসায় প্রবেশ করতে হয়। তখন ফুপির প্রচণ্ড মাথা ব্যথা শুরু হয়, কিন্তু সারাদিন এত কোলাহলের মাঝে ছিল দেখে বোধহয় ভেবে আর এত চিন্তা করেনি।
ওইদিন রাতে যখন সে ঘুমাতে যায়, তখন সে অনুভব করে কেউ তার পাশে বসে আছে, কিন্তু দেখে কেউ নেই। এরপর মাঝে মাঝে ফুপি ওখানে ওখানে ছায়া দেখতে পেত, কিন্তু কাউকে বলত না। কারণ প্রত্যেক বাসায় একটা করে প্রহরী থাকে যা জিন হয়, ফুপি ভাবত হয়তো এটা আমাদের বাসার প্রহরী, যেহেতু তখন পর্যন্ত তার কোনো ক্ষতি করেনি।
গল্পঃ নজর
লেখকঃ সিজুকা
অপার্থিবঃ ১২১
#Aparthibo
#MymensinghShortStories - Krátké a kreslené filmy