বাঁশি | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | Bashi | Rabindranath Tagore | Bangla poetry
Vložit
- čas přidán 12. 09. 2024
- কিনু গোয়ালার গলি।
দোতলা বাড়ি
লোহার-গরাদে-দেওয়া
একতলা ঘর
পথের ধারেই ।
লোনাধরা দেয়ালেতে
মাঝে মাঝে ধসে গেছে
বালি,
মাঝে মাঝে
স্যাঁতাপড়া দাগ ।
মার্কিন থানের
মার্কা একখানা ছবি
সিদ্ধিদাতা গনেশের
দরজার ‘পরে আঁটা ।
আমি ছাড়া ঘরে থাকে
আর একটা জীব
এক ভাড়াতেই,
সেটা টিকটিকি ।
তফাৎ আমার সঙ্গে
এই শুধু,
নেই তার অন্নের
অভাব ।
বেতন পঁচিশ টাকা,
সদাগরি আপিসের
কনিষ্ঠ কেরানি ।
খেতে পাই দত্তদের
বাড়ি
ছেলেকে পড়িয়ে ।
শেয়ালদা ইস্টিশনে
যাই,
সন্ধ্যেটা কাটিয়ে
আসি,
আলো জ্বালাবার দায়
বাঁচে ।
ইঞ্জিনের ধস ধস,
বাঁশির আওয়াজ,
যাত্রীর ব্যস্ততা,
কুলি-হাঁকাহাঁকি ।
সাড়ে-দশ বেজে যায়,
তার পরে ঘরে এসে
নিরালা নিঃঝুম
অন্ধকার ।
ধলেশ্বরী-নদীতীরে
পিসিদের গ্রাম -
তাঁর দেওরের মেয়ে,
অভাগার সাথে তার
বিবাহের ছিল
ঠিকঠাক ।
লগ্ন শুভ, নিশ্চিত
প্রমাণ পাওয়া গেল -
সেই লগ্নে এসেছি
পালিয়ে ।
মেয়েটা তো রক্ষে
পেলে,
আমি তথৈবচ ।
ঘরেতে এল না সে তো,
মনে তার নিত্য আসা-
যাওয়া -
পরনে ঢাকাই শাড়ি,
কপালে সিঁদুর ।
বর্ষা ঘনঘোর ।
ট্রামের খরচা বাড়ে,
মাঝে মাঝে মাইনেও
কাটা যায় ।
গলিটার কোণে কোণে
জমে ওঠে, পচে ওঠে
আমের খোসা ও আঁঠি,
কাঁঠালের ভূতি,
মাছের কান্কা,
মরা বেড়ালের ছানা -
ছাইপাঁশ আরো কত
কী যে ।
ছাতার অবস্থাখানা
জরিমানা-দেওয়া
মাইনের মতো,
বহু ছিদ্র তার ।
আপিসের সাজ
গোপীকান্ত
গোঁসাইয়ের মনটা
যেমন,
সর্বদাই রসসিক্ত
থাকে ।
বাদলের কালো ছায়া
স্যাঁত্সেঁতে ঘরটাতে
ঢুকে
কলে পড়া জন্তুর
মতন
মূর্ছায় অসাড় ।
দিনরাত, মনে হয়,
কোন আধমরা
জগতের সঙ্গে যেন
আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা পড়ে
আছি ।
গলির মোড়েই থাকে
কান্তবাবু -
যত্নে-পাট-করা লম্বা
চুল,
বড় বড় চোখ,
শৌখিন মেজাজ ।
কর্নেট বাজানো তার
শখ ।
মাঝে মাঝে সুর জেগে
ওঠে
এ গলির বীভৎস
বাতাসে -
কখনো গভীর রাতে,
ভোরবেলা আলো-
অন্ধকারে,
কখনো বৈকালে
ঝিকিমিকি আলো-
ছায়ায় ।
হঠাৎ সন্ধ্যায়
সিন্ধু-বারোয়াঁয় লাগে
তান,
সমস্ত আকাশে বাজে
অনাদি কালের
বিরহবেদনা ।
তখনি মুহূ্র্তে ধরা
পড়ে
এ গলিটা ঘোর মিছে
দূর্বিষহ মাতালের
প্রলাপের মতো ।
হঠাৎ খবর পাই মনে,
আকবর বাদশার
সঙ্গে
হরিপদ কেরানির
কোনো ভেদ নেই ।
ছেড়া ছাতা রাজছত্র
#premer_kobita
#bangla_kobita
#kobitarghor
Super bro.
Thank you