পদ্মা নদীর এমন রূপ যা আগে কখনো দেখেন নি।। TM traveler- 24 ।। PADMA RIVER ।। BANGLADESH

Sdílet
Vložit
  • čas přidán 30. 05. 2024
  • বাংলাদেশের উর্বরা ভূমিতে বিছিয়ে আছে অনেক নদ-নদী, খাল-বিল, হাওড়, বাওড়, ডোবা-পুকুর। আমাদের জীবন জীবিকার উৎস হিসেবে নদ-নদীগুলোর উদারতা অসীম। মৎস্য শিকার, যোগাযোগের মাধ্যম, বর্ষার প্লাবনের অবদানে গঠিত উর্বরা পলল ভূমি ও নানা কারণে একদা নদী পাড়েই গড়ে উঠত মানব বসতি। পদ্মা পাড়ের নগর, মহানগর, সহর বন্দরের উৎপত্তি এমনিভাবেই হয়েছে। পদ্মার উৎপত্তি ধরণীর সর্ববৃহৎ পর্বতমালা হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে। ভারতের হিমাচল প্রদেশে গোমুখ বিন্দুর কাছে বার হাজার আটশ ফুট উপরে অবস্থিত হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে ভাগীরথী ও অলকানন্দা দুটি ধারায় বেয়ে আসে । ভাগীরথী ও অলকানন্দার মিলিত স্রোত গঙ্গা নামে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হবার পর হরিদ্বারের নিকট সমতল ভূমিতে পড়েছে। তারপর ভারতের উত্তর প্রদেশ, বিহার ও পশ্চিম বঙ্গের বুকে বেয়ে আসার পর মুর্শিদাবাদের কাছে পদ্মা ও ভাগীরথী নামে দুটি শাখায় বিভক্ত হয় এবং ভাগীরথী নামেই ভারতের ভিতর দিয়ে বঙ্গোপসাগরের অথৈ লোনা জলে মিশেছে। এদিকে পদ্মা রাজশাহী অঞ্চলের পশ্চিম সীমানা দিয়ে আমাদের সবুজ ভূমিতে প্রবেশ করে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হবার পর গোয়ালন্দের নিকট যমুনার সঙ্গে ও চাঁদপুরের কাছে মেঘনার সাথে মিলিত হয়ে মেঘনা নামেই বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। উৎসমুখ থেকে সঙ্গম পর্যন্ত পদ্মার (গঙ্গা) দৈর্ঘ্য ১৫৫৭ মাইল। উৎসমুখ থেকে হিমালয়ের প্রবাহ সীমায় যে উপ-নদী উৎপন্ন হয়েছে তাদের মধ্যে যমুনা, কালী, বর্ণালী, ঘর্মরা, গ-ক ও কুশী প্রধান। আর দক্ষিণের উচ্চ ভূমি থেকে উৎপন্ন উপনদীগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো চম্বল, বেতওয়া, শোনেন। এগুলো উত্তর ভারতের সমতল ভূমিতে আবারো গঙ্গার সাথে মিলিত হয়েছে। পদ্মার উপনদীগুলোর মধ্যে মহানন্দা ও পুনর্ভবা বাংলাদেশ ও পশ্চিম বঙ্গের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পদ্মার শাখা নদীগুলোর মধ্যে ভৈরব, মাথাভাঙ্গা, কুমার, গড়াই, আড়িয়ালখাঁ ও প্রশাখার মধ্যে মধুমতী, পশুর, কপোতাক্ষ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। মূল পদ্মা ও তার শাখা, উপ-শাখা দিয়ে ফরিদপুরের যোগাযোগ ছিল পাবনা, কুষ্টিয়া, ঢাকা, যশোর, খুলনা, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। সুদূর ইউরোপ থেকে ওলন্দাজরা এ পদ্মার গায়ে ভর দিয়ে এ অঞ্চলে এসে রেশম ব্যবসা শুরু করেছিল। দেশ বিদেশের ছোট বড় জাহাজ, নৌকা নোঙ্গর করে বিভিন্ন মালামাল খালাস ও ভর্তি হত পদ্মার তীরে। সেকালে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম ছিল পানি পথ।পদ্মায় এক সময় পাঙ্গাস, বাঘাড়, বোয়াল, ইলিশ প্রভৃতি মাছ পাওয়া যেত। নদীতে ঘোলা জল পড়লেই পদ্মায় ইলিশ ধরার ধুম পড়ে যেত। জেলেরা সাধারণত ডিঙ্গি নৌকাকে বাহন করে বেড়াজাল দিয়ে নদীতে মাছ ধরতো। আর ইলিশ ধরার জন্য ব্যবহৃত হতো নদীর ধারে জোরালো স্রোতের জায়গায় লম্বা বাঁশে বাধা খোপার মতো জাল। এটা বাঁশজাল নামেই পরিচিত। মাছ ধরাকে কেন্দ্র করেই সদরপুরে পদ্মার পাড় ঘেঁষে গড়ে উঠেছে মৎস্যজীবীদের বসত বাড়ি ঘর । পূর্বে এ উপজেলার পদ্মা নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকায় প্রচুর জেলে সম্প্রদায়ের লোক থাকলেও এখন অনেক কমে গেছে। এর কারন পদ্মায় এখন তেমন মাছ ধরা পড়ে না।। পদ্মায় পূর্বের মত মৎস সম্পদ আহরণ না হলেও এখনও এলাকার জেলেরা নদীর ছোট বড় বিভিন্ন প্রকারের মাছ ধরে সদরপুর ফরিদপুরসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় টাটকা মাছ যোগান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। কৃষি কর্মেও পদ্মার উভয় পাড়ের অবদান অতুলনীয়। পদ্মার চরে অনেকের কৃষি জমি আছে। প্রতি বছর ধান, কলাই, বুট, মশুর প্রভৃতি ফসল ফলিয়ে সেখান থেকে তারা রুজি সংগ্রহ করেন। সে সব ফসল কাটা-মাড়া ও ওপার থেকে এপারে নিয়ে আনার জন্য নৌকা ব্যবহার করে অনেক মুটে-মুজুর তাদের জীবিকা নির্বাহ করেন। এছাড়াও পদ্মার বড় অবদান হলো খরা মৌসুমে নদী পার্শ্ববর্তী ও বরেন্দ্র অঞ্চলের ফসলী জমি শুকিয়ে গেলে আবাদের ব্যবস্থায় এর পারিন ব্যবহার। পদ্মার পানি সম্পদকে উপযুক্ত ব্যবহারের জন্য পাক্ আমলে পানি উন্নয়ন বোর্ড পদ্মার সাথে অনেক খাল খনন করে আবাদী জমির সঙ্গে সেচ ও নিষ্কাশণের ব্যবস্থা করেছিল। তাছাড়াও শাখা-উপশাখা দ্বারা বর্ষার সময় পদ্মার ঘোলা জল প্রবেশ করে দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে এবং ফসলী জমিগুলোকে পলল দ্বারা উর্বর ও সিক্ত করে। পদ্মার অবদান অপরিসীম হলেও কখনও সে পাগলা ঘোড়ার মত ক্ষেপে উঠে নদীর পাড় ধ্বংস করে। নদী পার্শ্ববর্তী গ্রাম মহল্লা স্কুল বাজার প্রভৃতি পদ্মার গহবরে তলিয়ে গেছে। গৃহ হারা হয়েছে অনেকে। ভারত সরকার পশ্চিম বাংলার ফারাক্কায় গঙ্গার উপর ব্যারেজ তৈরি করার পর পদ্মার পূর্বের রূপ আর নাই। পূর্বের মত আর ডিম ভরা ইলিশ ধরা পড়ে না পদ্মায়। বর্ষা মৌসুমে পদ্মা টইটম্বুর হলেও রেল ও সড়ক পথের উন্নতির ফলে জাহাজগুলো এখন প্রবীণদের স্মৃতির রোমন্থন মাত্র। সদরপুর উপজেলা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকার লোকজন চিত্তবিনোদনের অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে বেছে নিয়েছে পদ্মা পাড়। নীল আসমানের নিচে ওপারের সবুজ কাঁশবন, কখনও শান্ত পদ্মার নির্মল বাতাস, কখনও ভাঙ্গা ভাঙ্গা ঢেউ এর নাচন, প্রতিদিন স্বান্ধ্য প্রদীপ নেভার মতোই পশ্চিমাকাশে রক্তিম সূর্য ডোবা দেখার নেশায় হাজারো মানুষ ছুটে আসে পদ্মার মনোমুগ্ধ প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে। শুধু সদরপুর উপজেলাবাসীই নয়; পার্শ্ববর্তী এলাকার বহু লোকজন পদ্মাতীরের বাধ ও সারা তীরে পদার্পণ করে পদ্মাকে ধন্য করে তোলে। দিন বদলের পালায় সেকালের পদ্মা আর আজকের পদ্মার সাথে মানুষের জীবন কর্মের তফাৎ হলেও সম্পর্কের বিভেদ ঘটেনি। পদ্মা ছাড়াও প্রত্যেকটি নদীই আমাদের দেশের সম্পদ। এই নদী রক্ষায় আমাদের সকলের সহযোগী ভুমিকা রাখা দরকার। নদীতে পানির প্রবাহ ঠিক রাখা এবং দখল রোধের দায়িত্ব দেওয়া আছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পানি উন্নয়ন বোর্ডকে। আবার নদীর দূষণ ঠেকানোর দায়িত্ব পরিবেশ অধিদপ্তরের। এভাবে নদী রক্ষার সঙ্গে জড়িত আছে ২৭টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। নদীর অবৈধ দখল ও পরিবেশ দূষণ ঠেকাতে আছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আইনও। তবুও রক্ষা পাচ্ছে না নদী। তাহলে উপায় কী? উপায় একটাই আমাদের সবাইকে দেশের প্রতি দেশের প্রত্যেকটি সম্পদের প্রতি দ্বায়ীত্বশীল হওয়া। টি এম ট্রাভেলার 24 সব সময় আপনাদেরকে তথ্য সমৃদ্ধ ভিডিও তৈরী করে আপনাদেরকে উপহার দিতে চেষ্টা করে।

Komentáře • 6