বাগেরহাটের চাঁদেরহাটের ঐতিহ্য হারাতে বসেছে চান্দিনার অভাবে

Sdílet
Vložit
  • čas přidán 7. 09. 2024
  • বাংলার ইতিহাস ও সংস্কৃতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছে গ্রামীণ হাট বাজার। তৎকালীন গ্রাম বাংলার বিভিন্ন স্থানের নামকরণের ক্ষেত্রেও গুরুত্ব ছিল হাট বাজারের নাম তেমনি বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাট উপজেলার গাওলা ইউনিয়নের একটি ঐতিহ্যবাহী বাজারের নাম চাঁদের হাট। এলাকাবাসী জানান প্রায় আড়াইশো বছর আগে উদয় চাঁদ নামের এক ব্যক্তি এখানে তার নিজের জমিতে হাট বসান। আর পরবর্তীতে তার নামেই এই বাজারের নাম হয় চাঁদের হাট।
    শুক্রবার এবং সোমবার এই চাঁদের হাট বাজারের সাপ্তাহিক হাটের দিন। ফকিরহাট উপজেলা সহ আশপাশের প্রায় ১০ টি এলাকার লোকজন এখানে আসে কেনা বেচা করতে। এরমধ্যে জিয়ালতলা, নগরকান্দি, জয় খাল, গাওলা , সুড়ি গাতি, দক্ষিণ গাওলা, বারুই গাতী, কাঁঠালবাড়ি, চাকদা এলাকার মানুষ একমাত্র হাট হিসেবে এই চাঁদের হাট কেই বেছে নিয়েছে। তবে এই বাজারে সবচেয়ে বড় সমস্যার বিষয় হচ্ছে একটি চান্দিনার অভাব। বাজারে কাঁচামাল, মাছ, চাউল, কৃষিকাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন হাতিয়ার উপকরন, গৃহস্থলীর ব্যবহৃত মালামাল, বাহারি রঙের খাবারের দোকান সহ বিভিন্ন দোকান হাটবারে দেখা যায়। সকাল থেকে শুরু হয়ে রাত আটটা পর্যন্ত এখানে কেনাবেচা চলে। কিন্তু বিদ্যুতের ব্যবস্থা না থাকায় সন্ধ্যা হলেই করতে হয় আরেক বিড়ম্বনায়। বাৎসরিক দুই লাখ বিশ হাজার টাকা ইজারা ডাক হলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তাদের বাজার উন্নয়নের জন্য তেমন কোন মাথা ব্যাথা নেই বললেই চলে। দোকান প্রতি ১০ টাকা থেকে ত্রিশ টাকা পর্যন্ত খাজনা নিলেও তা বৃদ্ধি করতে আপত্তি নেই যদি একটি স্থায়ী চান্দিনা তারা পায় ব্যবসায়ীরা। বর্ষা মৌসুমে রোদ আর বৃষ্টি উপেক্ষা করে জীবিকার তাগিদে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা দোকানিরা আর বাজার করতে আসা হাটুরেরা কিছুটা শান্তিতে কেনাবেচা করতে পারবে যদি একটি স্থায়ী চান্দিনা তৈরি করা হয়।
    বাজারটি ঘিরে এর পাশেই উদয় চাঁদের দান করা সম্পত্তির উপর গড়ে উঠেছে একটি প্রাইমারি স্কুল একটি গার্লস স্কুল ও একটি সাইক্লোন সেন্টার। চাঁদেরহাট বাজার কে কেন্দ্র করে বাজারে ঠিক পূর্ব পাশ ঘেঁষে বয়ে গেছে পুরাতন ঢাকা রোড এর দুই পাশে ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গায় গড়ে উঠেছে বিভিন্ন দোকান। এসব দোকানে রয়েছে কসমেটিক্স, মুদি, ফার্মেসি, ভেটনারী ফার্মেসি, গো খাদ্য, আর বেশ কয়েকটি চায়ের দোকান। এলাকাটি নিম্না অঞ্চল হওয়ায় এখানকার মানুষের জীবিকার প্রধানতম মাধ্যম ঘের ব্যবসা। সারাদিন গৃহস্থলী আর অন্যান্য কাজ শেষ করে এসব চায়ের দোকানে এসে ভীড় জমাতে শুরু করে বিকাল হলেই। রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক সহ সংসদীয় সকল ধরনের আলোচনার এক উপকেন্দ্র যেন এসব চায়ের দোকান।
    বাজারে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও তৈরি হচ্ছে দিনে দিনে। মৎস ঘেড়ের চারপাশ নেট দিয়ে ঘেরার কাজে ব্যবহৃত বাঁশ বা লোহার গুজির পরিবর্তে প্লাস্টিকের গুজি আবিষ্কার করেছেন এক ফার্মেসী ব্যবসায়ী।
    বাজারটি শতবর্ষী ঐতিহ্য বহন করলেও নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে এমনটা উন্নয়ন হয়নি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনের কিছুটা উদাসীনতাই অনেকটাই পিছিয়ে আছে এই ঐতিহ্যবাহী বাজারটি। খুচরা কেনাবেচা থাকলেও পাইকারি কেনা বেচা নেই বললেই চলে। ফলে ঐতিহ্য বিলিনের সাথে সাথে প্রভাব পড়েছে কৃষিতে। এখন আর কৃষি পণ্য বাজারে নিয়ে দাম যাচাই করার সুযোগ হয়ে ওঠে না পাইকাররাই জমি থেকে কিনে নিয়ে যায়।
    এলাকাবাসীর দাবি এই এলাকার ঐতিহ্য ধরে রাখতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন যদি উদ্যোগ গ্রহণ করে তাহলে আবারও কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাওয়া আগের সেই জৌলস ফিরে পেতে পারে চাঁদের হাটের এই বাজার।

Komentáře •