অসমাপ্ত কবিতা/সভাপতি / নির্মলেন্দু গুণ/ Osomapto kobita/ Nirmalendu Goon/ আব্দুল্লাহ আল হাদী

Sdílet
Vložit
  • čas přidán 12. 09. 2024
  • মাননীয় সভাপতি... । সভাপতি কে? কে সভাপতি?
    ক্ষমা করবেন সভাপতি সাহেব,
    আপনাকে আমি সভাপতি মানি না।
    তবে কি রবীন্দ্রনাথ? সুভাষচন্দ্র বসু? হিটলার?
    মাও সে তুং? না, কেউ না, আমি কাউকে মানি না,
    আমি নিজে সভাপতি এই মহতী সভার।
    মাউথপিস আমার হাতে এখন, আমি যা বলবো,
    আপনারা তাই শুনবেন।
    উপস্থিত সুধীবৃন্দ, আমার সংগ্রামী বোনেরা,
    (একজন অবশ্য আমার প্রেমিকা এখানে আছেন)
    আমি আজ আপনাদের কাছে কিছু বলতে চাই।
    আপনারা জানেন, আমি কবি,
    রবীন্দ্রনাথ, শেক্সপীয়ার, এলিয়েটের মতোই
    আমিও কবিতা লিখি এবং মূলত কবি।
    কবিতা আমার নেশা, পেশা ও প্রতিশোধ গ্রহণের
    হিরন্ময় হাতিয়ার! আমি কবি, কবি এবং কবিই।
    কিন্তু আমি আর কবিতা লিখবো না ।
    পল্টনের ভরা সমাবেশে আমি ঘোষণা করছি,
    আমি আর কবিতা লিখবো না।
    তবে কি রাজনীতি করবো? কান্ট্রাক্টারী?
    পুস্তক ব্যবসায়ী ও প্রকাশক?
    পত্রিকার সাব-এডিটর?
    নীলক্ষেত কলাভবনের খাতায় হাজিরা?
    বেশ্যার দালাল?
    ফ্রী স্কুল স্ট্রীটে তেল-নুন-ডালের দোকান?
    রাজমিস্ত্রি? মোটর ড্রাইভিং? স্মাগলিং?
    আন্ডারডেভেলপমেন্ট স্কুলে শিক্ষকতা?
    নাকি সবাইকে ব্যঙ্গ করে, বিনয়ের সব চিহ্ন-সূত্র
    ছিঁড়ে-খুঁড়ে প্রতিণ্ঠিত বুড়ো-বদ-কবিদের
    চোখ-নাকে-মুখে কিংস্টর্কের কড়া ধোঁয়া ছুঁড়ে দেব?
    অর্থাৎ অপমান করবো বৃদ্ধদের?
    আপনারা কেউ বেশ্যাপাড়ায় ভুলেও যাবেন না,
    এরকম প্রতিশ্রুতি দিলে বেশ্যার দালাল হতে পারি,
    রসোন্মত্ত যৌবন অবধি-, একা-একা।
    আমার বক্তব্য স্পট, আমার বিপক্ষে গেলেই
    তথাকথিত রাজনীতিবিদ, গাড়ল বুদ্ধিজীবি,
    অশিক্ষিত বিজ্ঞানী, দশতলা বাড়িওয়ালা ধনী-ব্যবসায়ী,
    সাহিত্য-পত্রিকার জঘন্য সম্পাদক, অতিরিক্ত জনসমাবেশ
    আমি ফুঁ দিয়ে তুলোর মতো উড়িয়ে দেবো।
    আপনারা আমার সঙ্গে নদী যেমন জলের সঙ্গে
    সহযোগিতা করে, তেমনি সহযোগিতা করবেন,
    অন্যথায় আমি আমার ঘিয়া পাঞ্জাবির গভীর পকেটে
    আমার প্রেমিকা এবং ‘আ মরি বাংলা ভাষা’ ছাড়া
    অনায়েসে পল্টনের ভরাট ময়দান তুলে নেবো।
    ভাইসব, চেয়ে দেখুন, বাঙলার ভাগ্যাকাশে
    আজ দুর্যোগের ঘনঘটা, সুনন্দার চোখে জল,
    একজন প্রেমিকার খোজে আবুল হাসান
    কী নিঃসঙ্গ ব্যাথায় কাঁপে রাত্রে, ভাঙে সূর্য,
    ইপিআরটিসি’র বাস, লেখক সংঘের জানালা,
    প্রেসট্রাস্টের সিঁড়ি, রাজীয়ার বাল্যকালীন প্রেম।
    আপনারা কিছুই বোঝেন না, শুধু বিকেল তিনটা এলেই
    পল্টনের মাঠে জমায়েত, হাততালি, জিন্দাবাদ,
    রক্ত চাই ধ্বনি দিয়ে একুশের জঘন্য সংকলন,
    কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার কিনে নেন।
    আমি শেষবারের মত বলছি, আপনারা যার-যার ঘরে,
    পরনে ঢাকাই শাড়ি কপালে- সিঁদুরে ফিরে যান।
    আমি এখন অপ্রকৃতিস্থ-,
    পূর্ব বাঙলার অন্যতম ভীষণ মাতাল বক্তা একজন,
    ফুঁ দিয়ে নেভাবো আগুন, উন্মাদ শহর,
    আপনাদের অশ্লীল-গ্রাম্য-অসভ্য সমাবেশে,
    লালসালু ঘেরা স্টেজ, মাউথ অর্গান, ডিআইটি,
    গোল স্টেডিয়াম, এমসিসি’র খেলা,
    ফল অফ দি রোমান এ্যাম্পায়ারের নগ্ন পোষ্টার।
    এখন আমার হাতে কার্যরত নীল মাইক্রোফোন
    উত্তেজিত এবং উন্মাদ।
    শ্রদ্ধেয় সমাবেশ, আমি আমার সাংকেতিক
    ভয়াবহ সান্ধ্য আইনের সাইরেন বাজাবার সঙ্গে সঙ্গে
    মাধবীর সারা মাঠ খালি করে দেবেন।
    আমি বড় ইনসিকিওরড, যুবতী মাধবী নিয়ে
    ফাঁকা পথে ফিরে যেতে চাই ঘরে,
    ব্যক্তিগত গ্রামে, কাশবনে।
    আমি আপনাদের নির্বাচিত নেতা।
    আমার সঙ্গে অনেক টাকা, জিন্নাহর কোটি কোটি
    মাথা; আমি গণভোটে নির্বাচিত বিনয় বিশ্বাস,
    রিজার্ভ ব্যাংকের গভর্নর, অথচ আমার কোনো
    সিকিউরিটি নেই, একজন বডিগার্ড নেই,
    সশস্ত্র হামলায় যদি টাকা কেড়ে নেয় কেউ
    আমি কী করে হিসেব দেবো জনতাকে?
    স্বর্ণের মূল্য বৃদ্ধি হলে কন্যার কাঁকন যাবে খোয়া,
    আপনার আমার সকলের ক্ষতি হবে,
    সোনার হাতে সোনার কাঁকন আর উঠবে না।
    আপনারা ভাবেন, আমি খুব সুখে আছি
    কিন্তু বিশ্বেস করুন, হে পল্টন,
    মাঘী পূর্ণিমার রাত থেকে ফাল্গুনের পয়লা অবধি
    কী ভীষণ দুর্বিষহ আগুন জ্বলছে আমার দুখের দাড়িতে,
    উষ্কখুক চুলে, মেরুদণ্ডের হাড়ে, নয়টি আঙুলে,
    কোমরে, তালুতে, পাজামার গিঁটে, চোখের সকেটে।
    দেখেছি তো কাম্যবস্তু স্বাধীনতা, প্রেমিকা ও গ্ণভোট
    হাতে পেয়ে গেল নির্জন হীরার আগুনে
    পুলিশের জীপ আর টায়ারের মতো পুড়ে-পুড়ে যাই,
    অমর্যাদা করি তাকে যাকে চেয়ে ভেঙেছি প্রাসাদ,
    নদী, রাজমিস্ত্রী এবং গোলাপ।
    আমি স্বাধীনতা পেয়ে গেলে পরাধীন হতে ভালোবাসি।
    প্রেম এসে যাযাবর কন্ঠে চুমু খেলে মনে হয় বিরহের
    স্মৃতিচারণের মতো সুখ কিছুই নেই।
    বাক-স্বাধীনতা পেলে আমি শুধু প্রেম, রমণী, যৌনতা
    ও জীবনের অশ্লীলতার কথা বলি।
    আমি কিছুতেই বুঝিনা, আপনারা তবু কোন বিশ্বাসে
    বাঙলার মানুষের ভবিষ্যৎ আমার স্কন্ধ চাপিয়ে দিলেন।
    আপনারা কী চান?
    ডাল-ভাত-নুন?
    ঘর-জমি-বউ?
    রূপ-রস-ফুল?
    স্বাধীনতা?
    রেফ্রিজারেটর?
    ব্যাংক-বীমা-জুয়া?
    স্বায়ত্তশাসন?
    সমাজতন্ত্র?
    আমি কিছুই পারি না দিতে,আমি শুধু কবিতার
    অনেক স্তবক, অবাস্তব অন্ন বস্ত্র বীমাহীন
    জীবনের ফুল এনে দিতে পারি সকলের হাতে।
    আমি স্বাভাবিক সুস্থ সৌভাগ্যের মুখে থুথু দিয়ে
    অস্বভাবিক অসুস্থ শ্রীমতী জীবন বুকে নিয়ে
    কী করে কাটাতে হয় অরণ্যের ঝড়ের রাত্রিকে
    তার শিক্ষা দিতে পারি। আমি রিজার্ভ ব্যাংকের
    সবগুলো টাকা আপনাদের দিয়ে দিতে পারি,
    কিন্তু আপনারাই বলুন অর্থ কি বিনিময়ের মাধ্যম?
    জীবন কিংবা মৃত্যুর? প্রেম কিংবা যৌবনের?
    অসম্ভব, অর্থ শুধু অনর্থের বিনিময় দিতে পারে।
    স্মরণকালের বৃহত্তম সভায় আজ আমি
    সদর্পে ঘোষণা করছি, হে বোকা জমায়েত,
    পল্টনের মাঠে আর কোনোদিন সভাই হবে না,
    আজকেই শেষ সভা, শেষ সমাবেশে শেষ বক্তা আমি।
    এখনো বিনয় করে বলছি, সাইরেন বাজাবার সঙ্গে সঙ্গে
    আপনারা এই মাঠ খালি করে দেবেন।
    এই পল্টনের মাঠে আমার প্রেমিকা ছাড়া
    আর যেন কাউকে দেখি না কোনোদিন।
    এই সারা মাঠে আমি একা, একজন আমার প্রেমিকা।
    Abdullah Al Hadi Nirmalendu Goon আব্দুল্লাহ আল হাদী।
    নির্মলেন্দু গুণ,
    বহুল আবৃত্ত কবিতাসমূহের মধ্যে - হুলিয়া, অসমাপ্ত কবিতা, মানুষ (১৯৭০ প্রেমাংশুর রক্ত চাই), আফ্রিকার প্রেমের কবিতা (১৯৮৬ নিরঞ্জনের পৃথিবী) Je Jole Aagun Jole - (যে জলে আগুন জ্বলে - নির্মলেন্দু গুণ) স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো - নির্মলেন্দু গুণ, Mrinaler Patra_Kobi, মুজিব সমগ্র,

Komentáře • 39